Wellcome to National Portal

অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণের এল.এ চেক প্রাপ্তিতে এ কার্যালয়ে কোন অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয় না। কেউ কোন প্রকার অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব বরিশাল

এ কে ফজলুল হক        



বাঙালি রাজনীতিবিদ । বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালি কুটনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে‌‌‌ 'শেরেবাংলা' নামে পরিচিত। তিনি যে-সব রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তার মধ্যে কলকাতার মেয়র(১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬-১৯৫৮) অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ. কে. ফজলুক হক বহু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেই জোর দিয়েছিলেন বেশি। তার আমলে দরিদ্র কৃষকের উপরে কর ধার্য না করে সারা বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়। বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন। এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বৃটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ক্লাউড কমিশন গঠন করে। ১৯৩৮ সালের ১৮ আগস্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হয় এবং জমিদারদের লাগামহীন অত্যাচার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়। ১৯৩৯ সালের ‘বঙ্গীয় চাকুরি নিয়োগবিধি’ প্রবর্তন করে মন্ত্রিপরিষদ মুসলমানদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ চাকুরি নির্দিষ্ট রাখার ব্যবস্থা করে। এ বছরেই ‘চাষী খাতক আইন’-এর সংশোধনী এনে ঋণ সালিশী বোর্ডকে শক্তিশালী করা হয়। ক্লাউড কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৪০ সালে হক সাহেব আইন পরিষদে ‘মহাজনী আইন’ পাস করান। এ বছরই ‘দোকান কর্মচারি আইন’ প্রণয়ন করে তিনি দোকান শ্রমিকদের সপ্তাহে একদিন বন্ধ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের নির্দেশ জারী করেন। কৃষি আধুনিকায়নের জন্য ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনার দৌলতপুরে কৃষি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাট চাষীদের নায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালে ‘পাট অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। ১৯৪১ সালের ১২ ডিসেম্বর আবুল কাশেম ফজলুল হক দ্বিতীয় বারের মত মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। শরৎচন্দ্র বসু ও হিন্দু মহাসভার সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সঙ্গে প্রগতিশীল যুক্ত পার্টি গঠন করে তিনি সেই দলের নেতা হয়েছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর এই মন্ত্রী পরিষদ বাংলার গভর্ণর জেনারেল হার্বাটের কাছে শপথ গ্রহণ করেন। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।


আবদুর রব সেরনিয়াবত 





আবদুর রব সেরনিয়াবত ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরাইল গ্রামে। বরিশালের বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরম্ভ হয় গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে (১৯৫৬-১৯৫৭)। পরবর্তী সময়ে তিনি ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবত ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ও মুজিবনগর সরকার গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুনর্বার বরিশাল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তিনি নিহত হন।


বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে আইএসসি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে। বরিশালের নিজ গ্রামের নাম তাঁর দাদার নামে হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর ইউনিয়নের নাম 'আগরপুর' পরিবর্তন করে 'মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর' ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল জেলা পরিষদ ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মাণ করেছে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷


জীবনানন্দ দাশ            



জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) বিশ শতকের অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি।তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত। তাঁর লেখা বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো : ঝরা পালক (১৯২৭), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), বনলতা সেন (১৯৫২)।


কুসুমকুমারী দাশ             



কুসুমকুমারী দাশ একজন বাঙালি মহিলা কবি। কবিতাপ্রেমী বাঙালির কাছে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের নামটি নিবিড়, নির্জন ও নস্টালজিক এক কবিতার মতো। তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। কবি বলেন, ‘...মার মুখের ভাষা কি রকম প্রাণক্ষরা ছিল, কত লোকগাথা ও প্রবাসের যথোচিত সংমিশ্রণে তীর্যক ও উজ্জ্বল হয়ে উঠত, ....তা শুনেছি, বুঝেছি।’ তাঁর রচিত আদর্শ ছেলে, যার প্রথম চরণ ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’, বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কবি কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল শহরে ২১ পৌষ ১২৮৯ বঙ্গাব্দে এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাস এবং মাতা ধনমণি। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন। কুসুমকুমারী একটি পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তাঁর বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন। ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন ব্রহ্মবাদী পত্রিকায়। তাঁর অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে প্রবাসী ও মুকুল পত্রিকায়। তাঁর কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তাঁর কাব্যগ্রন্থ। পৌরানিক আখ্যায়িকা নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন।


মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত 




জনহিতৈষী ও জাতীয়তাবাদী নেতা মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত বৃহত্তর বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার অন্তর্গত বাটাজোরের একটি ছোট গ্রামে সচ্ছল কায়স্থ ভূম্যধিকারী পরিবারে ১৮৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ব্রজমোহন দত্ত একজন সাব-জজ ছিলেন। ব্যাচেলর অব আর্টস এবং মাস্টার্স অব আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুটি ডিগ্রিধারী অশ্বিনীকুমার দত্ত তাঁর জীবনের পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নেন। অবশ্য বরিশাল জেলা আদালতে স্বল্পকাল তিনি আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন।  মানবপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকার জন্য তিনি সুপরিচিতি লাভ করেন। সমাজের কল্যাণ এবং উন্নয়নের প্রতি গভীরভাবে নিবেদিত হয়ে তিনি বরিশাল শহরের মধ্যে নিজের দান করা এলাকায় ব্রজমোহন বিদ্যালয় (১৮৮৪) ও ব্রজমোহন কলেজ (১৮৮৯) প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছাত্রদের শারীরিক এবং নৈতিক দিকসমূহ বিকাশের জন্য তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘ কুড়ি বছর বিনা বেতনে কলেজে শিক্ষাদান করেন। তিনি বরিশাল শহরে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও (১৮৮৭) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সারাজীবনের সহিষ্ণু সমাজসেবা তাঁকে স্থানীয় জনগণের কাছে খুবই প্রিয় করে তোলে। জনগণের সদিচ্ছা ও তাঁর পরিবারের সম্পদ ও প্রভাবের কারণে তিনি এমন জনসমর্থন লাভ করেন যা তাঁকে ১৯০৫-১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় সংকীর্ণ জেলা পর্যায় থেকে বৃহত্তর প্রাদেশিক রাজনৈতিক অঙ্গনে নিয়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় তিনটি স্থানীয় সংগঠন জনসমিতি (১৮৮৬), বাখরগঞ্জ হিতৈষিণী সভা (১৮৮৭) এবং নেত্রী সংঘ তাঁর সহায়ক হয়েছিল। এ সংগঠনগুলির তিনিই ছিলেন পথপ্রদর্শক এবং এগুলির কর্মকান্ডে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি বরিশাল পৌরসভার কমিশনার (১৮৮৫) হয়ে এর ভাইস চেয়ারম্যান (১৮৮৮) ও চেয়ারম্যান (১৮৯৭)-এর দায়িত্ব পালন করেন।


সুফিয়া কামাল 

                


সুফিয়া কামালের জন্ম জুন ২০, ১৯১১, মৃত্যু নভেম্বর ২০, ১৯৯৯। বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখক ও নারীবাদী।স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা বাসন্তী সেসময়ের প্রভাবশালী সাময়িকী সওগাতে প্রকাশিত হয়। ত্রিশের দশকে কলকাতায় অবস্থানকালে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র যেমন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখের দেখা পান। বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা ও প্রতিজ্ঞা তাঁর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়, যা তাঁর জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যচর্চা চলতে থাকে। ১৯৩৭ সালে তাঁর গল্পের সংকলন কেয়ার কাঁটা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাঁঝের মায়ার মুখবন্ধ লিখেন কাজী নজরুল ইসলাম। বইটি বিদগ্ধজনের প্রশংসা কুড়ায় যাদের মাঝে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে আর্থিক সমস্যায় ফেলে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। দেশবিভাগের পূর্বে তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত সাময়িকী বেগম-এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কারফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।


আরজ আলী মাতুব্বর  



আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০১-১৯৮৬) স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক। তাঁর জন্ম বরিশাল শহর সংলগ্ন লামচরি গ্রামে। বিদ্যানুরাগী ও দরিদ্র এই মানুষটি নিজ গ্রাম লামচরিতে আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করেন। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তাঁর প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে সত্যের সন্ধান ও সৃষ্টি রহস্য উল্লেখযোগ্য।


বিজয় গুপ্ত


মনসাসঙ্গলের এই কবি পঞ্চদশ শতকে বরিশালের অদূরে ফুলশ্রী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মঙ্গলকাব্যের অন্যতম প্রাচীন কবি। মনসাসঙ্গল কাব্যের তিনি আদি কবি হিসেবে স্বীকৃত।


কামিনী রায়  



কামিনী রায়ের জন্ম পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) বাকেরগঞ্জের বাসণ্ডা গ্রামে(বর্তমানে যা বরিশাল জেলার অংশ)। তাঁর পিতা চন্ডীচরণ সেন একজন ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী, বিচারক ও ঐতিহাসিক লেখক ছিলেন। ১৯৭০ খ্রীস্টাব্দে চণ্ডীচরণ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা লাভ করেন। পরের বছর তাঁর স্ত্রী-কন্যাও কলকাতায় তাঁর কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন।তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: আলো ও ছায়া (১৮৮৯),  নির্মাল্য (১৮৯১), পৌরাণিকী (১৮৯৭), মাল্য ও নির্মাল্য (১৯১৩)।


সরদার ফজলুল করিম 



সরদার ফজলুল করিম (জন্ম: ১ মে, ১৯২৫) বাংলাদেশের বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দী হিসেবে দীর্ঘ ১১ বছর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।


আলতাফ মাহমুদ   




আলতাফ মাহমুদ একজন বাংলাদেশী সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসে গাওয়া আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির বর্তমান সুরটিও তাঁরই করা। এই গানের সুরকার হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত হয়ে আছেন।১৯৫০ সালের দিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসঙ্গীত গাইতেন। গান গাওয়ার মাধ্যমে মাহমুদ এই আন্দোলনকে সর্বদাই সমর্থন যুগিয়েছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের আলোড়ন সৃষ্টিকারী গানটিতে সুর সংযোজন করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন।১৯৬৯ সালে তিনি আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটিতে পুণরায় সুরারোপ করেন, যেটি প্রথমত সুর করেছিলেন আব্দুল লতিফ। এই সুরটি জহির রায়হানের চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া'য় ব্যবহৃত হয়।১৯৭১ সালে আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তাঁর বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী তাঁকে আটক করে। তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর বাসা থেকে আরো অনেক গেরিলা যোদ্ধা আটক হয়।এদের অনেকের সাথে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন।পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রারিত করেছিল।


মেজর জলিল             



মেজর জলিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক। তার সঙ্গী ১৬ জনের সবাই নামকরা মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ১৭ ডিসেম্বর খুলনায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলো এদের হাতেই। মিত্রবাহিনীর সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক জেনারেল দলবীর সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন মেজর জলিল।


আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ        



জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪, মৃত্যু ১৯ মার্চ, ২০০১। বাংলাদেশের একজন কবি যিনি পঞ্চাশ দশকের সঙ্গে চিহ্নিত। তাঁর পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের বাহেরচরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তানের আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ হতে এমএ পাস করেন। তাঁর দুটি দীর্ঘ কবিতা 'আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি' এবং 'বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা' আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে অভূতপূর্ব সংযোজন। তিনি সারাজীবন উচ্চপদস্থ আমলার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০-র দশকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।


আবদুল গাফফার চৌধুরী  



আবদুল গাফফার চৌধুরী একজন সুপরিচিত বাংলাদেশী গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো-এর রচয়িতা। তিনি বরিশাল জেলার এক জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৫০ সালেই গাফফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়। এ সময়ে তিনি দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে দৈনিক আওয়াজ বের করেন। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি দৈনিক আজাদ-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে সহিংস বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৬৯ সালের পয়লা জানুয়ারি সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক পূর্বদেশ-এ যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন। প্রবাসে বসে এখনও গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে লেখা কলাম অত্যন্ত জনপ্রিয়।


 


এ-ছাড়াও এ জেলায় জন্মগ্রহণকারী অন্যান্য প্রখ্যাত ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন :


আগা বাকের


বি ডি হাবিবুল্লাহ


আবদুল জব্বার


সুরকার আবদুল লতিফ


কবি আসাদ চৌধুরী


কবি মুকুন্দ দাস





মিঠুন চক্রবর্তী


হানিফ সংকেত

আবদুর রহমান বিশ্বাস


ড. কামাল হোসেন

মনোরমা বসু


কবি মোজাম্মেল হক